জাহান্নাম থেকে নারীদের পরিত্রাণের উপায়
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একদিন শুধু মহিলাদেরকে উপলক্ষ্য করে একটি ওয়াজ করেছেন। মহিলাদের এই সেই ওয়াজে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেনঃ “তোমরা একটু সদকা-খয়রাত বেশী করে করো” “কারণ, যখন আমি বেহেশত-দোযখ পরিভ্রমণ করেছি, তখন আমি জানতে পারলাম যে, দোযখের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশী। তখন মহিলারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “ইয়া রাসূলুল্লাহ! এর কারণ কি?” হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তখন এর কারণ হিসেবে মহিলাদের ৩টি দোষ বর্ণনা করেছেন। আর একটা বর্ণনা করলেন, সেটা তাদের দোষ না, কিন্তু সেটা তাদের কিছু নেকী কম হওয়ার বিষ। কারণ স্বরূপ মোট ৪টি জিনিষ বর্ণনা করলেন।
আরও দেখুন... একজন আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলী
১ম দোষ এটা বর্ণনা করেছেন যে, “সামান্য একটু ঝগড়া-বিতর্ক
কিছু হলেই তোমরা একে অন্যের প্রতি লাম্বন-তাম্বন তিরস্কার ইত্যাদি বেশী করে থাকো।”
২য় দোষ এই বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের মধ্যে উপকারীর উপকার
বিশেষতঃ স্বামীর বদান্যতা অস্বীকার করার স্বভাব খুব বেশী প্রকট।” হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন যে, দেখ, কেউ যদি তোমাদের প্রতি দীর্ঘদিন কোন উপকার করে, কোন
একদিন একটু ত্রুটি হয়ে গিয়েছে, তখন তোমরা পরিস্কার বলে ফেলো যে, তোমার থেকে কোন ভালই
আমি কোন সময় পাইনি।
আরও দেখুন... স্বামী-স্ত্রীর ভুল বুঝাবুঝিহলে করণীয় – মিজানুর রহমান আজহারী
১ম দোষ অর্থাৎ একটু ঝগড়া হলেই লাম্বন-তাম্বন গালী-গালাজ শুরু করায় অপরের মনে দারুন কষ্ট হয়। আর অপরকে এভাবে যারা কষ্ট দেয়, তাদের গুনাহ বেশী হওয়া স্বাভাবিক। আর এই স্বভাব যেহেতু মহিলাদের মধ্যে বেশী, এ জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, এটা এত বেশী গুনাহর কারণ যে, এর জন্য মহিলাদের সংখ্যা দোযখে বেশী হবে।
২য় দোষ অর্থাৎ যে কেউ মহিলাদের প্রতি কোন উপকার করে, এমনকি
স্বামীও যদি তার সহিত ভাল বরতাও করে, কিন্তু একটা দোষের বা কোন এক দিনের দোষের কারণে
সেই স্বামীর বিগত দিনের উপকারগুলো সে একদিনেই ভুলে যায়।
আর মহিলাদের উদ্দেশ্য করে ৩য় দোষ এই বলেছেন যে, তোমাদের
মধ্যে ছলনাটা অনেক বেশী, ছল-চাতুরী অনেক বেশী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিশেষ করে বলেছেন
যে, একজন বেশ বুদ্ধিমান ও খুব চালাক-চতুর পুরুষের জ্ঞানকে ঘোলাটে করে দিতে তোমরা এমন
পটু যে, এ রকম পটু আর কাউকে দেখা যায় না। এটাও মহিলাদের একটা দোষারূপে হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ) উল্লেখ করেছেন।
এ ৩টি দোষের কারণে মহিলাদের গুনাহ বেশী হয়, মহিলাদের গুনাহ বেশী হওয়ার কারণে তারা দোযখে বেশী যাবে।
৪র্থ বিষয়টা তাদের দোষ না, তবু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সেটা
উল্লেখ করেছেন এ জন্য যে, নেক আমল কোন কারণে যাদের কম হয়, তাদের সব সময় আল্লাহর দরবারে
দুর্বল হয়ে থাকা চাই এবং শোচনাগ্রস্ত থাকা চাই যে, আমার নেক কাজ এখানে কম হয়ে যাচ্ছে।
তাতে অন্যভাবে বেশী নেকী করার জন্য সে তৎপর হবে। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে একটা গুণ ছিল
যে, তাঁরা দোষ ছাড়াও যদি নেক কম করতেন তাহলে খুবই উদ্বিগ্ন হতেন এবং আল্লাহর কাছে নেহাত
জড়সড় হয়ে থাকতেন। যেমন নাকি সাহাবাদের মধ্যে যারা গরীব ছিলেন, তারা হুজুরের (সাঃ) দরবারে
এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলূল্লাহ (সাঃ) ধনী যারা, তারা তো ধন-সম্পদ দ্বারা বহু নেক কাজ করে
ফেলছে, আমরা তো তা পারতেছি না। কারণঃ আমাদের ধন নেই। টাকা-পয়সা থাকার কারণে ধনীরা যাকাত
দেয়, হজ্জ করে, দান-সদকা করে, এর দ্বারা তাদের বহুত সাওয়াব হয়, কিন্তু আমরা দিলেন যে,
প্রত্যেক নামাযের পর তাসবীহে ফাতেহী অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ
এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। এতে তোমরা টাকা-পয়সা খরচ না করা সত্ত্বেও ধনীদের
সমান ছওয়াবের অধিকারী হতে পারবে। সে রকমই পরিস্থিতির বর্ণনাস্বরূপ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
মহিলাদের জন্য ৪র্থ কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “বাধ্য হয়েই নেক কাজ তোমাদের কম হয়।
সেটা এভাবে যে, মাসের মধ্যে ১০ বা তার চেয়ে কিছু কম দিন তোমাদের এমন হালত যায় যে, তোমরা
নামায পড়তে পার না।”
এটা তাদের গুনাহ না, বা দোষ না, কিন্তু নামায যদি পড়তে
পারতো, তার তো ছওয়াব অবশ্যই পেতো। নামায পড়তে পারে না, তো সওয়াব হবে কি করে? এটা মহিলাদের
দোষ না হওয়া সত্ত্বেও এক্ষেত্রে কোন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তা উল্লেখ করলেন? তাদেরকে
এ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যে, তোমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে এ ধ্যান ও ফিকিরটা
রেখো যে, আমাদের তো মাসের মধ্যে ১০ দিনের ইবাদত কম হয়ে যায়। ১০ দিন আমরা নামায পড়তে
পারি না, কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি না। তাই বাকী ২০ দিন যে পাই, তার মধ্যে একটু বেশী
মেহনত করে কমীটা পূরণ করে দেই। এ জন্যই মহিলাদের নিকট হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এ ব্যাপারটি
উল্লেখ করেছেন। কাজেই জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির পন্থা হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
মহিলাদের যে ৩টি দোষ বর্ণনা করেছেন, এ দোষ সমূহ পরিহার করতে হবে। এ দোষগুলো পরবর্তী
যমানায়ই নয়, বরং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যমানায়ও মহিলাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু হুজুরের
(সাঃ) যুগের সেই মহিলাগণ সাধনা করে সংযম ইখতিয়ার করে দোষগুলো বর্জন করে জান্নাতের সরদার
হওয়ার বা জান্নাতবাসীনী হওয়ার সু-সংবাদ লাভ করেছেন। আমাদেরও সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
আর ৪র্থ বিষয় হিসেবে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মহিলাদের যেহেতু নেক কাজ কিছু কম হয়, তাই সুযোগের সময় বেশী বেশী নেক আমল করে উক্ত ক্ষতি পূরণে আমাদের সচেষ্ট হওয়া চাই।
0 Comments