কোন মহিলা যদি তার চরিত্রে নিম্নোক্ত গুণাবলীর সমাবেশ
ঘটাতে পারে তাহলে সে একজন আদর্শ ও কল্যাণকামী স্ত্রী হিসাবে সুখময় সংসার জীবন-যাপন
করতঃ পরকালীন মুক্তি ও পুরস্কার লাভে ধন্য হতে পারে।
ধৈর্য একটি মহৎ গুণ। ধৈর্য সাফল্যের সোপান। একজন ধৈর্যশীলা
স্ত্রীই পরিবারের সকলকে যেকোন ধরনের মারাত্মক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও
বিভিন্ন সমস্যা রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পেয়ে আত্মমর্যাদা
লাভ করতে পারে। প্রবাদে বরে, “যে সহে সে রহে।” উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, স্বামী যদি কোন
কারণে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে স্ত্রীকে কোন কটু কথা বলে ফেলে এবং স্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে
উত্তপ্ত জবাব না দিয়ে একটু ধৈর্যধারণ করে এবং স্বামীর ক্রোধ প্রমমিত হলে মিষ্টি স্বরে
প্রতিবাদ জানায়, তাহলে স্বামী তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে। এতে স্ত্রী
নিজে যেভাবে একটি আসন্ন অঘটন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি পরিবারকে একটা ধ্বংসাত্মক
পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে
আছেন।” (সূরাহ বাকারা)
সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী মানুষ সর্বত্রই সমাদৃত। একজন সত্যবাদী
ও মিষ্টভাষী স্ত্রী পরিবারের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। পক্ষান্তরে ককর্ষভাষী স্ত্রী দ্বারা
কেউই শান্তি পায় না, তাই সে সকলের কাছেই অসহনীয় ও ঘৃণিত। হাদীস অনুসারে সত্যবাদী ও
উত্তম আচরণকারী আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট খুবই প্রিয়। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “নিশ্চয়ই
অহংকারী ও ককর্ষভাষী কখনো বেহেশতে প্রবেশাধিকার লাভে সক্ষম হবে না।” (আবু দাউদ) রাসূল
(সাঃ) মিরাজের রাত্রে কিছু সংখ্যক মহিলাকে জিহ্বার সাথে লটকানো দেখতে পেয়ে হযরত জিব্রাইল
(আঃ) এর মাধ্যমে জানতে পারলেন এরা ঐ সকল মহিলা যারা কথাবার্তায় সংযত ছিল না। এরা কথাবার্তায়
স্বামীসহ আশে-পাশের লোকদেরকে কষ্ট দিত।
আল্লাহ পাক মুমিন নারী-পুরুষের প্রতি পর্দা ফরজ করেছেন।
পর্দা হল একজন আদর্শ ও সম্ভ্রান্ত মহিলার প্রতীক। মহান আল্লাহ মহিলাদের আপদ মস্তক ঢেকে
রাখাকে ফরজ করেছেন। পর্দা মানুষের মধ্যে লজ্জা সৃষ্টি করে এবং যৌন অপকর্ম থেকে দূরে
রাখে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ। একজন পর্দানশীল নারী যার তার
সাথে মেলামেশা করতে পারে না, তার পর্দা ও লজ্জা তাকে হেফাজত করে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ
করেনঃ মিরাজের রাত্রে পর্দাহীনতার কারণে কিছু মহিলাকে মাথার চুল দ্বারা লটকানো দেখা
গেছে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ ‘প্রত্যেক ধর্মেরই
একটি বৈশিষ্ট রয়েছে, ইসলামের বৈশিষ্ট্য হল শালীনতা।
চোগলখোরী একটি মারাত্মক ব্যাধি। এর জন্য কেরামতে কঠিন
শাস্তি ভোগ করতে হবে। চোগলখোর সমাজের পরম শত্রু। এদের কারণে সমাজে বিশৃংখলা ও অরাজকতার
সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে স্ত্রীর যদি এ দোষ থাকে, তাহলে উক্ত পরিবারে কোন শান্তি থাকে
না।
যদিও ইসলামী বিধান মোতাবেক স্ত্রীর যাবতীয় ভরণ-পোষণের
দায়িত্ব স্বামীর উপর অর্পিত, তথাপিও স্ত্রীকে স্বামীর সমার্থের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি
রাখা তার দায়িত্ব। স্বামীর নিকট কোন কিছুর দাবী করতে হলে স্বামীর সামর্থ বিবেচনা করতে
হবে। স্বামীর পক্ষে প্রদান করা অসম্ভব এমন কিছু দাবী করা আদর্শ স্ত্রীর গুণ নয়। স্বামী
সামর্থানুযায়ী কম-বেশী এবং ভাল-মন্দ যাই প্রদান করবে, একজন আদর্শ স্ত্রী সন্তুষ্টিচিত্তে
তাই গ্রহণ করবে। মোটকথা, অল্পে তুষ্টি একজন আদর্শ স্ত্রীর অন্যতম গুণ।
উত্তম ব্যবহার উত্তম চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। যে স্ত্রী
তার স্বামী ও স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে সে উত্তর নারী হিসেবে
পরিগণিত, দুনিয়াতে সে সকলের আদরের পাত্র ও শান্তির প্রতীক এবং কেয়ামতে আল্লাহপাকের
করুণার দৃষ্টি পাওয়ার উপযোগী।
স্বামী-স্ত্রী একই দেহের দু’টি অঙ্গ। দু’জনের সমন্বয়ে
একটি নতুন সংসারের সূত্রপাত হয়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিকট অধিকার প্রাপ্য। তবুও স্বামী
স্ত্রীর উপর কর্তৃত্বশীল। কুরআনের ভাষায়ঃ “পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল।” (সূরাহ নিসাঃ
৩৪) আল্লাহপাকের এ নির্দেশ স্ত্রীর নতশীরে মেনে নিতে হবে। তার বিপরীত কাজ করলে পারিবারিক
শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। যদি কোন মহিলা অহংকার বশতঃ স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে
নিতে অস্বীকার করে তাহলে এই পরিবারে কোন দিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। স্বামীর কর্তৃত্বের
ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “যদি নির্দেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম
স্বামীকে সিজদা করতে।” (তিরমিযী) রাসূল (সাঃ) অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ “কোন মহিলা যেন তার
স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত ফরজ রোযা ছাড়া অন্য কোন রোযা না রাখে।’ (তিরমিযী
শরীফ)।
0 Comments