বিয়ের
ব্যাপারে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা
বিয়ে সম্পর্কে
হাদীস শরীফে বিস্তর বর্ণনা রয়েছে। বিয়ে, বর-কনে, সংসার প্রভৃতি বিষয়ে রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) হতে অজস্র হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় হাদীস নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “তিন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয় সাহায্য করেনঃ
(১) যে গোলাম
তার মালিকের প্রাপ্য আদায় করে আযাদ হতে চায়।
(২) যে বিয়েকারী
নিজেকে ব্যাভিচার হতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিয়ে করে।
(৩) যে ব্যক্তি
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” (নাসায়ী শরীফ)
আরও দেখুন- ইসলামে যে মেয়ে বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষেধ
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ তোমাদের নিকট যখন তোমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য এমন পাত্রের পক্ষ থেকে
বিয়ের প্রস্তাব আসেঃ যার চরিত্র ও ধর্মীয় অবস্থার প্রতি সন্তুষ্ট হও, তবে বিয়ে করিয়ে
ফেল। যদি বিয়ে না করাও, তবে পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদের সৃষ্টি হবে।” (তিরমিযী শরীফ)
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “তোমরা এরূপ রমণীকে বিয়ে করঃ যে রমণী মিশুক এবং বংশগতভাবে বেশী সন্তান
প্রসবকারিণী। কেননা, আমি আমার উম্মতের সংখ্যাধিক্যের জন্য অন্য উম্মতের উপর গর্ববোধ
করবো। এমন কি অকালে গর্ভপাত হওয়া সন্তান দ্বারাও।” (আবু দাউদ শরীফ)
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “বিয়ের ন্যায় পরস্পরে বেশী মহব্বত অন্য কিছুতে হয় না।” (মিশকাত শরীফ)
আরও দেখুন- একজন আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলী
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “আল্লাহকে ভয় করার পর কোন মুমিন বান্দা নেক স্ত্রী হতে আর কোন কিছুর
দ্বারা এত লাভবান হতে পারে নাঃ যে স্ত্রী তার আদেশ মুতাবিক কাজ করে, দেখলে নয়ন জুড়ায়,
স্বামীর কসম পূর্ণ করে, স্বামী বাড়ীতে না থাকলে নিজেকে এবং স্বামীর মাল সম্পদকে হিফাযত
করে।” (ইবনে মাজাহ)
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “বান্দা যখন বিয়ে করল, সে তার অর্ধেক দ্বীন (পরহেযগারী) পূর্ণ করল।
তাই তার কর্তব্য বাকী অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা। (মিশকাত শরীফ)
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি বিয়ের ক্ষমতা রাখে, অথচ বিয়ে করেনা, সে আমার তরীকায়
নেই।”
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে বিয়ে করবে, তাকে এ সংক্রান্ত সর্ব বিষয়ে
সাহায্য করা হবে।”
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে বিয়ে করল বা বিয়ে দিল, সে ব্যক্তি আল্লাহর
সহিত দুস্তি করল।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “পরকালে আল্লাহ তা’আলা যখন তার বান্দাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন,
তখন বান্দা বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমি এ মর্যাদা কিভাবে পেলাম?” তখন বলা হবে, “তোমাদের
সন্তানের দু’আর বরকতে।”
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “সেই পুরুষ মিসকীনঃ যার স্ত্রী নেই এবং সেই রমণী মিসকীনঃ যার স্বামী
নেই। যদিও তারা ধনী থাকে।”
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “আল্লাহ তা’আলা স্বামী-স্ত্রীর মুখ-সম্ভোগ ও হাসি-তামাসা দেখে খুশী
হন এবং কার্যের জন্য তাদের আমলনামায় ছাওয়াব লিখেন। আর তাদের জন্য হালাল রিযিকের ব্যবস্থা
করেন।” (কানজুল উম্মাল)
হাদীসে শরীফে
বর্ণিত আছেঃ
(১) “কোন
ব্যক্তি যদি জামা’আতে নামায পড়ার জন্য মসজিদে যায় সে যতটুকু ছাওয়াব পায়, মসজিদ হতে
পরিবারের নিকট আসলেও ততটুকু ছাওয়াব পায়।”
(২) “স্ত্রীর
দিকে দেখা ও সবুজের দিকে দেখাতে চোখের জ্যোতি বাড়ে।”
(৩) “কোন
স্বামী যখন তার স্ত্রীর দিকে লক্ষ্য করে এবং স্ত্রী স্বামীর দিকে তাকায়, তখন আল্লাহ
তা’আলা তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি করেন, আর স্বামী যখন তার স্ত্রীর হাতে ধরে, তবে উভয়ের
পাপসমূহ তাদের অঙ্গুলীর ফাঁক দিয়ে ঝরে পড়ে (ছোট পাপ)।”
(৪) “কোন
যুবক যখন তার যৌবনের প্রারম্ভেই বিয়ে করে ফেলে, তবে শয়তান এই বলে চিল্লাতে থাকে যে,
“এই ব্যক্তি আমা হতে তার ধর্মকে বাঁচিয়েছে।”
(৫) “বিবাহিতদের
দুই রাকা’আত নফল নামায অবিবাহিতদের ৮২ রাকা’আত হতে উত্তম।”
(৬) “বান্দা
যখন তার পরিবারের কোন কাজে বাহির হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি পদে একটি দরজা বাড়িয়ে
দেন। আর যখন কাজ করে ফেলে, তখন তার গুনাহ মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি কষ্টে-শিষ্টে বা
সচ্ছলতায় যে কোন স্থান থেকে তার পরিবারের লোকদের জন্য বনোদাবস্তের চেষ্টা করে, সে পরকালে
উচ্চ দরজা লাভ করবে।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “চারটি গুণ দেখে মেয়েকে বিয়ে করা হয়-
(১) মাল,
(২) বংশ, (৩) সৌন্দর্য ও (৪) ধার্মিকতা।
তুমি ধার্মিকা
নারীকে বিয়ে কর, তাতে সফলতা পাবে।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “দুনিয়ার সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাস। আর দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম
বিলাস নেক বিবি।” (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “তোমরা বাকিরা (সতিচ্ছেদ সম্পন্না) যুবতীকে বিয়ে কর। কেননা, তারা
সবচেয়ে মিষ্টভাষিণী, বেশী সন্তান প্রসবকারিণী এবং কমে সন্তুষ্টিনী।” (ইবনে মাজা)
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “উম্মতের মেয়েদের মধ্যে তারাই বেশী ভালঃ যাদের মুখমুণ্ডল উজ্জ্বল,
কিন্তু মহর অতি কম।”
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ “মানুষের সৌভাগ্য এই যে, তার স্ত্রী নেক্কার হওয়া, সন্তানগণ নেক্কার
হওয়া, বন্ধু-বান্ধব নেক্কার হওয়া এবং তার জীবিকা হালাল হওয়া।”
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ “তোমরা খাযরায়ে দামন মেয়েলোককে বিয়ে করো না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা
করলেনঃ তা কেমন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ “চরিত্রাহীনা সুন্দরী।” (বুস্তানুল আরেফীন)
বিয়ে জীবনের
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী তথা শরীয়তের বিধিবদ্ধ হুকুম
মত বিয়ে করলে, ইহ জীবনে সুখ এবং পরজীবনে মুক্তি ও কল্যাণ লাভের আশা করা যায়।
0 Comments