Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ইসলামের চোখে নারীর অর্থ উপার্জন ! মিজানুর রহমান আজহারীর মতামত

স্ত্রীর ঘাড়ে অর্থ উপার্জনের বোঝা চাপানো ! মিজানুর রহমান আজহারীর মতামত 

ইসলামের চোখে নারীর অর্থ উপার্জন ! মিজানুর রহমান আজহারীর মতামত
-

ইসলাম নারীর উপর অর্থনৈতিক কোন দায়-দায়িত্ব চাপায়নি। পরিবারের আর্থিক দায়-দায়িত্ব বহন করা পুরুষের উপর অর্পিত হয়েছে। সেহেতু নারীকে তার জীবিকার জন্য চাকরি করার প্রয়োজন নেই। তবে পুরুষের উপার্জন যদি সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট না হয় এবং প্রকৃত অভাবের সময়, সংকটকালে উভয়েই চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে এমন অবস্থাও নারীর স্বাধীনতা রয়েছে। ইচ্ছা করলে সে বাইরে চাকরি করতে পারে, ইচ্ছা করলে নাও করতে পারে। কেউ জোর করে তার ঘাড়ে চাকরির বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে না। চাকরি না করে পুরুষের উপার্জন ভোগ করা তার অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তার ঘাড়ে উপার্জনের বোঝা চাপিয়ে দেয়া অন্যায়, জুলুম। নারীর চাকরি করার অধিকার অবশ্যই আছে। ইসলাম নারীকে বাইরে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। কারণ, ইসলাম এমনি বাস্তব ও প্রাকৃতিক ধর্ম। এর পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত, এর আয়তন অতি ব্যাপক। তা মানবীয় প্রয়োজনেও জীবনের সর্বাবস্থায় সাড়া দেয়। অনেক মহিলাকে বাইরে কাজ করতে হয়। বিভিন্ন পরিস্থিতি তাদেরকে বাইরে কাজ করতে বাধ্য করে। যেমন করে বাপ মারা গেলে মাকে চাকরি করতে হয়, চাকরি করে এতিম ছেলে-মেয়েদের মুখে দু’মুঠো ভাত দুলে দিতে হয়। কোন গরীব যুবতীর বিয়েশাদী না হলে তাকে চাকরি করে জীবন বাঁচাতে হয়।

-

কিন্তু যাদের সংসার সচ্ছল, স্বামী বা ভাই চাকরি করে, তাদের সংসারেই প্রচুর কাজ রয়ে গেছে। তাদের বাইরে কাজ করার সময় ও সুযোগ কোথায়? যাদের পুরুষরা সারাদিন বাইরে কাজ করে জীবিকা উপার্জন করে, তাদের জন্য বাড়িতে একটা শান্তিপূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশ, একটা আরামদায়ক প্রতিবেশ সরবরাহ করা নারীর দায়িত্ব। ইসলামের অসাধারণ সৌন্দর্যগুলোর মধ্যে একটা সৌন্দর্য এই যে, পুরুষকে উপার্জন, রক্ষণাবেক্ষণ ও নারীর ভরণ-পোষণের কাজে নিয়োজিত রেখে নারী জাতিকে এ সকল দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। আর নারীর উপর পুরুষের জন্য শান্তিপূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশ সৃষ্টি করা, গর্ভে সন্তান ধারণ করা, সন্তান জন্ম দেয়া, তাদের লালন-পালন করা, শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে তোলা ইত্যাদির এক লম্বা ধারাবাহিক কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারীর প্রধান কাজ ও প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে স্ত্রী ধর্ম ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। এ গুরু দায়িত্বের উপর যদি তার উপর নিজের ভরণ-পোষণের জন্য এবং ছেলে-মেয়েদের উপার্জনের প্রচণ্ড কষ্ট-ক্লেশের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়, তবে সেটা হবে নারীর প্রতি অন্যায়-অবিচার।

যে আমল করলে উত্তম জীবনসঙ্গী নিশ্চিত

চাকরি করা, ব্যবসা করা, রাজনীতি করা ইত্যাদি হচ্ছে নারীর জন্য দ্বিতীয় স্থানীয় কাজ, তার জন্য বৈধ, কিন্তু অতিরিক্ত। নারীর প্রধান ও প্রাথমিক দায়িত্বের উপর যদি এ সমস্ত অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া না হয়, তবে তাদের সাংসারিক জীবন হয় সুখের।

-

তাই রাসূলুল্লাহ (সা:) স্বামীর খেদমত করা, সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা, মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করাঃ যেমন, সন্তান গর্ভে ধারণ করা, তাদের সুশিক্ষা দান করা, তাদের চরিত্র গঠন করা ও ভবিষ্যৎ জীবনের উন্নতি সাধন করা ইত্যাদির জন্য নারী জাতিকে উৎসাহিত করেছেন। তাছাড়া ঘর গুছানো, ঘর সাজানো, রান্না-বান্না করা, কাপড় সেলাই করা ইত্যাদি গৃহস্থালী কাজের এত ব্যাপক দায়িত্ব প্রকৃতগতভাবেই নারী জাতির উপর ন্যস্ত করে দেয়া হয়েছে। এত কাজ করা সত্ত্বেও বাইরের পরিবেশ পুরুষালী দায়িত্ব পালন করার জন্য নারীদের এত সময় ও সামর্থ কোথায়? মুসলমান নারীদের বাইরে চাকরি করার অধিকার অবশ্যই আছে। তবে তাদের ঘাড়ে অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে তাদের অধিকার খর্ব করা অন্যায়। অতিরিক্ত কাজ নারীর ঘাড়ে চাপানো জুলুম ছাড়া কিছু নয় । অথচ ঘরোয়া পরিবেশে মাতৃত্বের ও স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে থাকলে নারীদের চিন্তাধারা ও মন-মানসিকতা ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হওয়ার সুযোগ পায় না। আর পুরুষ ও পারিবারিক দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে তার উপর অর্পিত পুরুষালী দায়িত্ব পালন করতে পারে। অথচ স্থূলবুদ্ধির পণ্ডিতরা নারী চারি দেয়ালে আবদ্ধ বলে দোষারোপ করে। যেই সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভিন্ন মত, চিন্তাধারাও মনমানসিকতা থাকে, সেখানে কোন দিন সুখ-শান্তি আসতে পারে না। যে স্ত্রীরা চাকরিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেলার সুযোগ পায়, তাদের মন-মানসিকতা অভিন্ন থাকে না, স্বামীর সাথে মতনৈক্য অবশ্যই হয়।

স্বামী-স্ত্রী মিলে মিশে এক আত্মা, এক প্রাণ হলেই মানুষ দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারে। ইসলাম তাই মানুষকে পারিবারিক জীবনে সুখী হওয়ার জন্য নারী জাতিকে বাইরের কর্মের দায়িত্বের চেয়ে ঘরোয়া পরিবেশে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করেছে। অথচ অন্য ধর্মের লোকেরা এবং পাশ্চত্য ঘেসা তথাকথিত প্রগতিবাদীরা আর নারীবাদীরা নারীর গাঢ়ে অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে তারা নারী অধিকার খর্ব করছে। ইদানি প্রগতির দোহাই দিয়ে নারী জাতিকে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে, ক্ষেত-খামারে, মেঝে-মঞ্চে, অফিস-আদালতে, কল-কারখানায়, মাঠে-ময়দানে প্রভৃতি কর্মক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়।

তথাকথিত প্রগতিবাদী ও নারীবাদীরা বলেঃ নারীর হাত হোক কর্মীর হাতিয়ার। এভাবে উন্নতির নামে তারা নারীদের উপরে পুরুষের কর্মের দায়িত্ব চাকরির বোঝা, মার্কেটিং এর সাজা চাপিয়ে দিচ্ছে। অবলা-দুর্বলা নারী জাতির উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো অন্যায়, এভাবে তাদের অধিকার খর্ব করা অবিচার।

একজনে দশ কাজ বা দশজনে এক কাজ করলেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির নিয়ম ও আল্লাহর বিধান ভঙ্গ করে নারীকে বাহিরমুখী করায় মানুষের পারিবারিক জীবন থেকে সুখ-শান্তি ক্রমশ বিদায় নিচ্ছে। অধিকাংশ চাকরিজীবী মহিলাদের মধ্যে এমন এক লাগামহীন স্বাধীনতা এসে যায় এবং তারা এমন উশৃংখল হয়ে পড়ে, যা পারিবারিক জীবনে অশান্তির কারণ হয়ে দেখা দেয়। তারা ৫০% অবৈধ অধিকার দাবী করে বসে। পয়সার গরমে তারা স্বামীর কথা আর মানতে চায় না। কেউ কেউ মুখ খুলে স্বামীকে বলেই ফেলে আমি কি তোমার চাকর? পক্ষান্তরে স্বামী স্ত্রীকে অফিসে পাঠিয়ে মনে শান্তি পেতে পারে না, মনে মনে সন্দেহ করতে থাকে, ভাবে হয়তো স্ত্রী অন্যের সাথে গোপন প্রণয়ে জড়িত হচ্ছে। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রী উভয়ে বাইরে কাজ করলে ঘরে ছেলে-মেয়েরা উশৃংখল হওয়ার সুযোগ পায়। বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়।

আজ যদি বিভিন্ন সমাজের প্রতি লক্ষ করা হয়ঃ তবে অবশ্যই দেখতে পাওয়া যাবে, আজ ঐ সকল নারীদেরকে মূল্য দেয়া হচ্ছে, তাদেরকে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, যারা পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে পুরুষালী সকল কাজ করতে পারে এবং একই সাথে জনসাধারণের সামনে তাদের মেয়েলি আকর্ষণ প্রকাশ করতে পারে, মেয়েলি সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে পারে। অথচ এ সকল মহিলা সন্তান জন্ম দেয়া ও তাদের লালন-পালন করার মত বিশাল দায়িত্ব একই সাথে পালন করে যাচ্ছে।

এ বিশাল দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি জীবনের প্রায় সকল স্তরে যদি পুরুষের সমমূল্যের কাজও তাকে করতে হয় তবে তা হবে নারী জাতির প্রতি অন্যায় আচরণ। একথা সত্য বলে স্বীকার করতেই হবে। এ অন্যায় আচরণের পরিণতি হচ্ছে খুবই মারাত্মক? বর্তমান কালে নারী-পুরুষের কাজের প্রভেদ নির্ণয় করার ব্যাপারে বিশৃংখলা অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে তালাকের হার এত বেড়ে গেছে এবং জারজ সন্তানের এত ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

যাহোক, ইসলামে নারী জাতির মূল্য, সমাজে তাদের গুরুত্ব ও মানুষ হিসেবে তাদের কৃতকার্যতার পরিমাণ নির্ণয় করা হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন নীতিতে। আর তা হলো, খোদাভীতি ও তার আনুগত্য স্বীকার করা, স্বামীর প্রতি তার কর্তব্য পালন করা, সন্তান গর্ভে ধারণ করা, তাদের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষা দেয়ার যে সকল দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত হয়েছে, সে সকল পূর্ণ করার উপর। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ