খেয়ে এসেছেন নাকি গিয়ে খাবেন
বছর কয়েক আগে, কলকাতা গিয়েছিলাম, পরিবার পরিজনসহ। আমার একজন ঘনিষ্ঠ হিন্দু সহকর্মীর শ্যালক কলকাতাবাসী। তিনি আমাদের তাঁর বাসায় লাঞ্চের জন্য নিমন্ত্রণ জানান।
শুরুতেই, বেগুন ভাজি ও ডাল পরিবেশন করা হলো। আমাদের জেলার
কালচারে ডাল সাধারণত শেষ আইটেম। আমরা পরস্পরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলাম।
আপনি যা সন্দেহ করেছেন, আমাদের মনেও সে একই সন্দেহ দোলা দিচ্ছিল। আরো শুনেছিলাম,
একটা কলা পরিবেশন করে বলে, পুরোটাই খাবেন কিন্তু। ডিমের বেলায়ও একই কথা। কি আর
করা?
তারপর, একটু দেরিতে সকল সন্দেহ নিরসন করে একে একে সরষে বাটা ইলিশ, মুরগির রোস্ট, আলুর দম ও আরো কয়েক কিসিমের ব্যঞ্জন ডাইনিং টেবিলে জমা হতে লাগলো। শেষে দই, সন্দেশ তো আছেই। সবার মনে আফসোস, বেগুন ভাজি আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে পেট ভরে কি বোকামিই না করেছি।
পরবর্তীতে কলকাতায় কারো নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেয়ে এ ধরনের
ভুল আর করিনি। জামাই না হয়েও, সবখানেই জামাই আদর। এসব উদ্ভট প্রশ্ন এবং চিন্তা
ভাবনার উৎস, চিরন্তন ঘটি-বাংলা নিয়ে পরস্পরকে রসিকতা করার প্রবণতা থেকে।
আপনাদেরও হয়তো কৌতুহল থাকতে পারে, আমরা যাদের অতিথি হয়েছিলাম
তারা ঘটি না বাঙাল? ফিফটি ফিফটি। ভূপেন হাজারিকার- মিলে মিশে একাকার। কর্তা বাঙাল হলেও ভাড়ারের চাবিকাঠি ছিল
গিন্নির আঁচলে। তিনি ঘটি।
সম্পাদনা-১
একটা সাধারণ প্রশ্নের, অতি মামুলি উত্তর ২৩.৮ হাজার ভিউ ও ৩১১
আপভোট দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। এতে বোঝা যায়, রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণায়
রেষারেষি থাকলেও , হৃদয়ের গভীরে উপমহাদেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বাঙালিরা বেশি
উদার এবং পরস্পরের প্রতি সহনশীল মনোভাবসম্পন্ন।
সম্পাদনা-২
আবারও অবাক কান্ড! সময়ের পরিসরে এ সাবজেক্টে উৎসাহে ভাটা না পড়ে
বেড়েই চলছে। উৎসাহটা উসকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু বাড়তি তথ্য ও গল্প যোগ করে দেয়া
হলো।
নোয়াখালীর কাহিনীঃ
এলাকাভিত্তিক কিপটেমি সম্পর্কে সব দেশেই কিছু না কিছু রসিকতা
চালু আছে। যেমন বাংলাদেশে নোয়াখালীবাসিদের কথা বলা হয় তারা নাকি খুব কিপ্টে। অনেকে
আরো বলে, কারও বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেয়ে তারা অপেক্ষা না করে সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নেয়।
তাদের নাকি পৃথিবীর সবখানেই পাওয়া যায়। তেনজিং-হিলারি মাউন্ট এভারেস্ট চূড়ায় উঠে
দেখেন, তাদের আগেই সেখানে দুজন নোয়াখালীর লোক রান্না বান্না করছে। তাদের বেশ কিছু
ডলার দিয়ে মুখ বন্ধ করে নিজেরাই কৃতিত্বের দাবি করে। এ সবই ভুয়া কথা। কিছু রসিকতা
কিছু ঈর্ষা।
পাঠানের বোকামির কাহিনীঃ
ভারতে শিখ এবং পাকিস্তানের পাঠানদের বোকামি নিয়ে অনেক চুটকি ও
গল্প চালু আছে। যেমন, এক পাঠানের বাসায় চোর এসেছে। পাঠান তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে
থানায় পুলিশ আনতে গেল।
দারোগা জিজ্ঞেস করল, তাকে কিভাবে বেঁধে রেখেছো। পাঠান বলল, কেন
পা দুটো বেঁধে রেখেছি।
পুলিশ বলল, এই না হলে পাঠান, হাত খোলা রেখে শুধু পা বেঁধে
রেখেছো? পাঠালের সহজ উত্তর, সেও তো পাঠান,
হাত দিয়ে বাঁধন খোলার চিন্তা মাথায় আসবে না।
অথচ কে না জানে, পাঠানদের একদিকে যেমন শৌ্র্য বীর্য অন্যদিকে
তাদের বুদ্ধির অভাব নেই। ব্রিটিশ ভারতের ইংরেজ এবং অধুনা রাশিয়া ও আমেরিকানরা তা
হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।
শিখদের কাহিনীঃ
শিখদের বুদ্ধিমত্তার অভাব নিয়ে কত যে চুটকি আছে তার হিসাব
নিকাশ নেই। যেমন, এক সরদারজি লন্ডন গিয়ে দোতলা বাসে উঠেছেন। তিনি দোতলা সিটে বসলে,
চিৎকার করে বললেন, সর্বনাশ বাস থামাও, দোতলায় কোন ড্রাইভার নেই। প্রখ্যাত শিখ
লেখক খুশবন্ত সিংও নিজের সম্প্রদায়ের বোকামির কথা নিয়ে একটা পুস্তক রচনা করেছেন।
অথচ আমরা সবাই জানি শিখরা পৃথিবীর সবখানে দাপটের সাথে বাস করে।
লন্ডনে তাদের জন্য একটা মহল্লাই আছে, ডঃ মনমোহন সিং তো ভারতের অর্থনীতির
ল্যান্ডস্কেপ পাল্টে দিয়েছেন।
আমেরিকার কিপ্টেমি ও উদারতার কাহিনীঃ
আমেরিকার বিরাট দেশ, প্রাচুর্যের দেশ কিন্তু কিপটে যেমন আছে,
উদার লোক তেমনই আছে। একজন আমেরিকা প্রবাসী গণ্যমান্য বাঙ্গালির কাছে শোনা, লস
অ্যাঞ্জেলেস রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছেন। তার টেবিলের পাশে মা মেয়ে খেতে এসেছেন।
তাদের আলাপে বুঝতে পারলেন, মেয়ে দুরের অন্য এক শহর থেকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে
এসেছেন।
খাবার অর্ডার দেওয়ার সময় মা ওয়েটারকে বললেন, আমাদের দুজনের বিল
আলাদা করে দিবে। ঢাকায় এর একটা বিচিত্র নাম আছে, হিজ হিজ, হুজ হুজ অর্থাৎ যার যার
তার তার। কিন্তু উপমহাদেশে মা-মেয়ের মধ্যে খাবার বিল ভাগাভাগি করার কথা কেউ
স্বপ্নেও ভাববে না।
কলকাতাবাসীরা সত্যিই কি অতিথিকে জিজ্ঞেস করেন-
অন্যদিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে নিউ ইয়র্কে সেমিনারে অংশ
নিতে গেলে, একজন খুবই স্বল্প পরিচিত আমেরিকান কী জানি কোথা থেকে খবর পেয়ে ব্যাংকে
এসে আমার সাথে দেখা করার জন্য ঘন্টাদুয়েক বাইরে বসে ছিলেন। সেমিনার শেষে আমাকে এক
রেস্টুরেন্টে প্রচুর আপ্যায়ন করেন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক আমেরিকাতেও এমন স্বহৃদয় লোকের
অভাব নেই। কাজেই দুটো একটা ঘটনার উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত টানা ঠিক নয়।
আইরিশদের কিপ্টেমির কথাঃ
আইরিশদের বদনাম আছে, তারা নাকি হাড় কিপটে। সৈয়দ মুজতবা আলীর এক
গল্প, একজন ইংরেজ, একজন ফরাসি, একজন জার্মান, একজন আইরিশ পিকনিক করবে। বলা হলো,
সবাই একটা কিছু নিয়ে আসবে। ইংরেজি নিয়ে এলো বেকন, ফরাসি শ্যাম্পেন, জার্মান সসেজ।
অন্যদিকে আইরিশ নিয়ে এলো তার ভাইকে।
অথচ ব্রিটিশ ভারতে, ইংরেজরা লুটপাট করলেও দান-খয়রাত যা করেছে
তা করেছে আইরিশরা। ধূর্ত ইংরেজরা এ তাদের গায়ে এই বদনাম ছিটিয়েছ। বাংলাদেশে এক
আইরিশ কনসালটেন্টকে ইংরেজ মনে করে বললাম, তোমরা তো আমাদের দেশে দূশো বছর লুটপাট
করেছে।
তিনি বললেন, এসব পাগলের মত কথা বোলো না, তোমাদের মাত্র ২০০ বছর
লুটপাট করেছে আমাদের ৮০০ বছর ধরে লুটপাট করে চলেছে, এখনো থামেনি। ইংরেজরা ইউরোপিয়ান
ইউনিয়ন থেকে সরে গেছে, আইরিশ রয়ে গেছে। এ নিয়ে ভীষণ টানাপোড়েন চলছে।
গোপালগঞ্জে খেতে বসে খাবার দেখে হতাশঃ
পরিশেষে, আমাদের বাংলাদেশ গোপালগঞ্জ জেলার এক ধনাঢ্য পরিবারের দাওয়াতে যেয়ে খাবারের স্বল্পতা এবং মান দেখে হতাশ হয়েছিলাম। গত বছরের অক্টোবর মাসে সে গল্পটা কোরা ইংরেজি ও বাংলাতে দেয়া হয়েছিল। বাংলা ভার্সনের নিচের লিংক দেওয়া হল। সময় থাকলে পড়তে পারেন।
0 Comments