Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

যে নারীর আশেপাশের প্রায় সবাই জান্নাতী, জেনে রাখুন ...

যে নারীর আশেপাশের প্রায় সবাই জান্নাতী


যে নারীর আশেপাশের প্রায় সবাই জান্নাতী

ইতিহাসে এমন একজন নারী আছেন, যিনি নিজে জান্নাতী, যার বাবা জান্নাতী, যার মা জান্নাতী, যার স্বামী জান্নাতী, যার সন্তান জান্নাতী, যার দুলাভাই জান্নাতী। তিনি হলেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। ইতিহাসে এমন নারী এক এবং অদ্বিতীয়।

[আরও পড়ুন- লোক দেখানো ইবাদতের ভয়ঙ্কর পরিনাম]

# ফাতিমা (রা:) নিজে জান্নাতী।

# তাঁর বাবা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জান্নাতী।

# তাঁর মা খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) জান্নাতী।

# তাঁর স্বামী আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জান্নাতী।

# তাঁর পুত্রদ্বয় হাসান-হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) জান্নাতী।

# তাঁর বোনের জামাই উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জান্নাতী।


রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়াত লাভের প্রায় ৫ বছর পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও খাদিজার (রা:) ছোটো মেয়ে। খাদিজার (রা:) ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর মেয়েরাও ইসলাম গ্রহণ করেন।

[আরও পড়ুন- সাহাবাদের২৫টি প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উত্তর]

এমন অভিজাত বংশে জন্ম যেন ফাতিমাকে (রা:) গর্বের আতিশায্যে ইবাদাত করা থেকে বিরত না রাখে সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সতর্ক করে দেন। ফাতিমা (রা:) যেন এমনটা মনে না করেন যে, তাঁর বাবা তো বিশ্বনবী, তাঁর বাবা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করলে তো আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দেবেন। বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “হে মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতিমা! আমার ধন সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। কিন্তু আল্লাহর নিকট আমি তোমার কোনই উপকারে আসবো না।”


বাবার কথামতো তিনি ইবাদাতে নিজেকে এতোটাই ব্যস্ত রাখতেন যে, তাঁর আশেপাশের মহিলাদের সাথে তিনি কম সময় কাটাতেন। সারাটা সময় কাটতো তাঁর নামাজ পড়ায়, কুরআন তেলাওয়াতে। যার ফলে তাঁকে অনেকেই ‘আল-বাতুল’ বলে ডাকতো।

[আরও পড়ুন- সিজদাহদীর্ঘ করবেন কেন? জানলে অবাক হবেন]

ফাতিমা (রা:) এর ছোটোবেলা কেটেছে বাবাকে নির্যাতিত হতে দেখে। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা ঘরে নামাজ পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদাহ গেলেন তখন উক্ববাহ ইবনু আবু মু’আইত উটের গোবর, রক্ত আর নাড়িভুঁড়ি তাঁর দু’কাধের মাঝখানে রেখে দিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এগুলোর ভারে সিজদায় স্থির হয়ে রইলেন।

রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই অবস্থায় দেখে কাফেররা হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে লুটিয়ে পড়ে। ফাতিমা (রা:) তখন ছিলেন ছোট্ট বালিকা। বাবাকে জনসম্মুক্ষে এভাবে অপদস্থ হতে দেখে ফাতিমার মন মোচড় দিয়ে উঠে। তিনি দৌড়ে গিয়ে বাবার কাঁধ থেকে দুর্গন্ধময় নাড়িভুঁড়িগুলো নামান। কুরাইশ নেতৃবৃন্দের ভয়ে অনেকেই তাদের সামনে কথা বলতো না। কিন্তু ফাতিমা (রাঃ) রাগতস্বরে তাদেরকে তিরস্কার করলেন। কাফেরদের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না।


আরেকদিন ফাতিমা (রাঃ) বাবার হাত ধরে কা’বা ঘরে যান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেই না হাজরে আসওয়াদের কাছাকাছি গেলেন, তখনই একদল মুশরিক তাঁকে ঘিরে ধরলো, তাঁর গায়ের চাদরটি তাঁর গলায় পেঁচিয়ে ধরলো। বাবাকে অপদস্থ হতে দেখে ফাতিমা (রাঃ) ভয়ে হাত-পা জমে গেলো। তাঁর শ্বাস-নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো। তারপর আবু বকর (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন।

[আরও পড়ুন- বিয়েরব্যাপারে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ]

ফাতিমাকে (রাঃ) বিয়ের জন্য অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব যেতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমাকে বিয়ে দেন তাঁর কথানুযায়ী ‘সবচেয়ে শক্ত ঈমানের অধিকারী, সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সবচেয়ে ভালো মনের অধিকারী’ হযরত আলীর (রাঃ) সাথে।


হযরত আলী (রাঃ) তখন এতোটাই দরিদ্র ছিলেন যে, বিয়েতে মোহর দেবার মতো তাঁর কাছে কোনো সম্পদ ছিলো না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার বর্মটি কোথায়?” আলী (রাঃ) বললেন, “সেটি তো আমার কাছে আছে।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে নির্দেশ দেন, মোহর হিসেবে ফাতিমা (রাঃ) কে বর্মটি দিয়ে দিতে।


হযরত আলী (রাঃ) বর্মটি নিয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্মটি বিক্রি করতে বলেন। বর্মটি বিক্রি করেন উসমান (রাঃ) এর কাছে। উসমান (রাঃ) ৪৭০ দিরহাম দিয়ে বর্মটি কিনে আবার বর্মটি আলী (রাঃ) কে উপহার হিসেবে প্রদান করেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষের কন্যার বিয়ে এরকম সাদামাটা হয়।


বাবার পরিবারে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও স্বামীর পরিবারে গিয়ে ফাতিমা (রাঃ) দেখতে পান দারিদ্র্যের কশাঘাত। বিয়ের পর যাঁতা পিষতে পিষতে তাঁর হাতে কড়া পড়ে যায়, মশক ভর্তি পানি টানতে টানতে তাঁর বুকে দাগ পড়ে যায়, ঘর-বাড়ি ঝাড়ু দিতে দিতে তাঁর পোশাক ময়লা হয়ে যেতো।


এসব কষ্ট থেকে একটুখানি স্বস্তির জন্য তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একজন খাদিমের জন্য আবেদন করেন। যাতে করে তাঁর কষ্ট কিছুটা লাগব হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দুনিয়ার এমন কষ্ট খুব স্বাভাবিক ভাবে নিতে বলে তাঁর ফোকাসটা আখিরাতের দিকে ঘুরিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমা (রাঃ) এবং তাঁর স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

তোমরা যা চেয়েছিলে, আমি কি তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দেবো না? তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশবার ‘আল্লাহু আকবার’ তেত্রিশবার ‘সুবহানআল্লাহ’ এবং তেত্রিশবার ‘আলহামদুল্লাহ’ পড়ে নিবে। এটা খাদিম (পাওয়া) অপেক্ষা উত্তম।


স্বামী-স্ত্রী রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে চাইলেন দুনিয়ার একজন খাদিম, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে দিলেন আখিরাতের রসদ। রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলা জিকিরগুলোর উপর স্বামী-স্ত্রী আজীবন আমল করেছেন। আলী (রাঃ) বলেন, “আমি কখনো এগুলো পড়া বাদ দেইনি।” তখন একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “এমনকি সিফফিনের রাতেও?” আলি (রাঃ) তখন জোর দিয়ে বললেন, “এমনকি সিফফিনের রাতেও না।”


ফাতিমা (রাঃ) দেখতে ছিলেন অনেকটা বাবার মতো। এমনকি তাঁর কথাবার্তা, চাল-চলন ছিলো প্রায় হুবহু রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মতো। আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে শারীরিক গঠন, চাল-চলন, চরিত্র, আলাপচারিতা ও কথাবার্তায় ফাতিমার চাইতে এতো মিল আমি আর কাউকে দেখিনি।”


ফাতিমা (রাঃ) যখন রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাসায় যেতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা থেকে উঠে মেয়ের হাত ধরে চুমু খেতেন, ফাতিমাকে (রাঃ) নিজের বসার জায়গায় বসতে দিতেন। ঠিক তেমনি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও যখন ফাতিমার (রাঃ) বাসায় যেতেন, ফাতিমা (রাঃ) উঠে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাতে চুমু খেতেন, তাঁর নিজের বসার জায়গায় রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসতে দিতেন।


রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকালের আগে একদিন বাবা-মেয়ের হাসি-কান্না দেখে আয়িশা (রাঃ) বলেন, “আজকের মতো দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে আনন্দ ও খুশি আমি আর কখনো দেখিনি।”


বাবা-মেয়ের হাসি-কান্নার কারণ জানতে আয়িশা (রাঃ) বেশ উদগ্রীব ছিলেন। কিন্তু ফাতিমা (রাঃ) সেদিনের হাসি-কান্নার কারণ তাঁকে জানালেন না। অবশেষে যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তেকাল করলেন, তখন একদিন আয়িশা (রাঃ) আবার ফাতিমাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি সেদিন তোমার কানে-কানে কী বলেছিলেন?

অতঃপর ফাতিমা (রা:) বললেন- প্রথমবার তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আমার মনে হয় আমার বিদায় বেলা উপস্থিত। আর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। এটা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি এতে সন্তষ্ট নও যে, তুমি হবে জান্নাতবাসী মুমিন নারীদের সর্দার। এটা শুনে আমি হেসে দিলাম।


রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যৎবাণী সত্য প্রমাণিত হয়। তাঁর মৃত্যুর ছয়মাস পর ফাতিমা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় ফাতিমার (রাঃ) বয়স ছিলো ২৯ বছর। ফাতিমার (রাঃ) গর্ভে জন্ম হয় রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদরের দুই নাতি হাসান-হুসাইন-মুহসিনের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)। ফাতিমার (রাঃ) মাধ্যমে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরবর্তী বংশধর বিস্তার লাভ করে। ফাতিমা (রাঃ) জীবিত থাকাবস্থায় আলী (রাঃ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যাকে এতোটাই ভালোবাসতেন যে, তিনি বলতেন, ফাতিমা আমার (কলিজার) টুকরো। যে তাঁকে দুঃখ দিবে, সে যেন আমাকে দুঃখ দিলো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ