রাজস্ব বেড়েছে
সুন্দরবনের মধু সংগ্রহে
বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সুন্দরী গাছ, মধু, মোমসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দরবন। অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎসের পাশাপাশি এই বন আমাদের দেশের মধুর চাহিদাও পূরণ করছে। কী নেই বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ এই বনে। করোনাকালে মধু আহরণে মৌয়ালদের সঙ্গে সুন্দরবনে কেটেছে ‘মধুর সম্পর্ক’। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) থেকে সুন্দরবনে আহরণ শুরু হচ্ছে মধু। অন্যান্য বছর পহেলা এপ্রিল থেকে মধু ও মোম সংগ্রহের কাজ শুরু হলেও এবার কিছুটা আগেই শুরু হচ্ছে।
-
খুলনা, বাগেরহাট
ও সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এই বন
বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অবস্থিত। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০,০০০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। জীববৈচিত্র্যের আধার
এই সুন্দরবন। দেশে মধু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র সুন্দরবন। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) থেকে সুন্দরবনে
মধু আহরণ শুরু হচ্ছে। এ বছর ১৫-১৭ দিন আগেই শুরু হচ্ছে মধু ও মোম সংগ্রহের কাজ। এদিকে
সুন্দরবনে মধু ও মোম সংগ্রহে বাড়তি রাজস্ব গুণতে হবে মৌয়ালদের। সুন্দরবন ভ্রমণ, মধু,
মোমসহ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে রাজস্ব আদায়ের হার অনেক বৃদ্ধি হয়েছে।
সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ
বন বিভাগের সূত্র
অনুযায়ী জানা যায়, চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারির গেজেট অনুযায়ী সুন্দরবনের প্রতি কুইন্টাল
মধু সংগ্রহে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৬০০/- (এক হাজার ছয়শত) টাকা। যা পূর্বে ছিল
১,০০০/- (এক হাজার) টাকা। ফলে প্রতি কুইন্টাল মধুতে রাজস্ব বেড়েছে ৬০০/- (ছয়শত) টাকা।
আর প্রতি কেজি মধুতে বেড়েছে ৬ টাকা। একইসঙ্গে প্রতি কুইন্টাল মোম সংগ্রহে রাজস্ব বেড়েছে
২০০ টাকা। আর প্রতি কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। পূর্বে প্রতি কুইন্টাল মোমে রাজস্ব দিতে
হতো ২,০০০/- (দুই হাজার) টাকা। বর্তমানে বাড়িয়ে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ২,২০০/- (দুই
হাজার দুইশত) টাকায়।
বন বিভাগের সূত্রে
আরও জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ কেজি মধু ও মোম
সংগ্রহ করা হয়। মধু ও মোম থেকে থেকে রাজস্ব আদায় হয় ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪১৩ টাকা। এর মধ্যে
৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কেজি মধু থেকে ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৩ টাকা এবং এক লাখ ৩৩ হাজার ৯০৫
কেজি মোম থেকে ১৩ লাখ ৩৯০ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়।
-
জানা গেছে, ১৮৬০
সাল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা হয়। বনসংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বংশ পরম্পরায়
মধু সংগ্রহ করে। এদের মৌয়াল বলা হয়। সুন্দরবনের সবচেয়ে ভালো মানের মধু খোলসী ফুলের
‘পদ্ম মধু’। মানের দিক থেকে এরপরেই গরান ও গর্জন
ফুলের ‘বালিহার মধু’। মৌসুমের একেবারে শেষে আসা কেওড়া
ও গেওয়া ফুলের মধু অপেক্ষাকৃত কম সুস্বাদু। মধু সংগ্রহের জন্য প্রতি বছরের ১ এপ্রিল
থেকে তিন মাসের (এপ্রিল, মে ও জুন) জন্য বন বিভাগ মৌয়ালদের অনুমতিপত্র (পাস) দেয়। মধু
সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগে বিশেষ প্রার্থনা করে নেন মৌয়ালরা। এবার ১৫ দিন আগেই অর্থাৎ
১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহের পাস পারমিট দিচ্ছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পশ্চিম
বিভাগের বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, আগে মৌয়ালদের পাস-পারমিট দেওয়া
হতো। কিন্তু কিছু মৌয়াল পাস-পারমিট না নিয়ে অবৈধভাবে আগেই বনে ঢুকে মধু আহরণ শুরু করেন।
এর ফলে পাস-পারমিট নিয়ে বনে যাওয়া মৌয়ালরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মধু আহরণ করতে পারেন না।
বনের মৌচাকগুলোতে ১৫ মার্চ থেকেই মধু পাওয়া যায়। সে কারণে এ বছর ১৫ মার্চ থেকে মধু
সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, এবার ১৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে মধু ও মোম আহরণের পাস দেওয়া হচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে মঙ্গলবার এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। তিনি জানান, এবার মধু ও মোম সংগ্রহে রাজস্ব বেড়েছে। প্রতি কেজি মধুতে ৬ টাকা এবং প্রতি কেজি মোম সংগ্রহে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
0 Comments